লিখেছেন ড. খালিদ আবু শাদী
বান্দা গুনাহ যতবারই করুক না কেন, যত বেশি করুক না কেন আল্লাহ তাআলার ক্ষমা করতে কোন অন্তরাল নেই (অর্থাৎ ক্ষমা পাবার আশা আছে) তবে চারটি বিষয় বা কাজ আছে যেগুলোর কারণে গুনাহ থেকে ক্ষমা পেতে অন্তরাল হয় বাধাপ্রদানকারী হয়। সেগুলো নিম্নে বর্ণিত হল—
(১) আল্লাহর সাথে শিরক বা অংশীদার সাব্যস্ত করা:
الظلم ثلاثة، فظلم لا يتركه الله، وظلم يُغفر، وظلم لا يُغفر. فأما الظلم الذي لا يُغفر، فالشرك لا يغفره الله. وأما الظلم الذي يُغفر، فظلم العبد فيما بينه وبين ربه. وأما الظلم الذي لا يترك، فظلم العباد، فيقتص الله بعضهم من بعض-
জুলম তিন প্রকার। একপ্রকার জুলম, যার সম্পাদনকারীকে আল্লাহ তাআলা ছেড়ে দেবেন না, আরেক প্রকার রয়েছে যা ক্ষমা করে দেওয়া হবে, আরেক প্রকার যা ক্ষমা করা হবে না। যে জুলমকে ক্ষমা করা হবে না, তাহল শিরক করা যা আল্লাহ পাক ক্ষমা করবেন না। আর যে জুলমকে ক্ষমা করা হবে তাহল: বান্দা ও তার রবের মধ্যকার জুলম। আর আল্লাহ তাআলা যে জুলমকে ছেড়ে দেবেন না তা হল: বান্দা অন্য বান্দার প্রতি জুলম করা। এক্ষেত্রে তিনি একে অপরের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। (সিলসিলাতুস সহিহাহ: ১৯২৭)
(২) মুসলমান পরস্পরে ঝগড়া ফাসাদ ও বিদ্বেষ করা:
জান্নাতের দরজাসমূহ সোমবার ও বৃহস্পতিবারে খোলা হয়। অতপর যার কুফরি করে না তাদের সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় তবে সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না যে তার অপর ভায়ের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে। তখন বলা হয়, এই দুজন যতক্ষণ নিজেরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে না জড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দাও, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না পরস্পর সংশোধন না হয়, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না তারা সংশোধন হয়। (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৫)
হাদিস শরিফের বাহ্যিক অবস্থা থেকে বোঝা যায় যে, পরস্পর একে অপরকে ঘৃণাকারী, শত্রুতা পোষণকারীরা মাগফেরাত থেকে মাহরূম হবে অথচ মাগফিরাত প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবারে পাওয়া যায়। আর তাদেরকে মাগফেরাত দিতে বিলম্ব করা হবে যতক্ষণ তারা পরস্পরে সংশোধন না হয়, সন্ধি না করে নেয় এবং একে অপরের বন্ধু না হয়ে যায়। তাদেরকে ধমকি দেওয়া হয়েছে, এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
(৩) হারাম খানা-পিনা:
বান্দা যখন এমন অবস্থায় মাগফেরাতের দু্আ করে যে, সে মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তার খাদ্য থাকে হারাম, তার পানীয় থাকে হারাম এবং তার পরিধেয় বস্ত্র হারাম থাকে তাহলে তার দুআ কবুল না হওয়াটা তার জন্য উপযোগী।
(৪) গুনাহকে প্রকাশ করা-প্রচার করা:
গুনাহ মাফ না হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক প্রভাব রাখে গুনাহকে প্রকাশ করা। একারণে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا الْمُجَاهِرِينَ وَإِنَّ مِنْ الْمُجَاهَرَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ فَيَقُولَ يَا فُلَانُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ
সালিম বিন আবদুল্লাহ হতে তিনি বলেন আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছ থেকে শুনেছি তিনি বলেন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার সকল উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তাআলা তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল। (সহিহ মুসলিম: ৬০৬৯)
অনুবাদ-মুহিববুল্লাহ খন্দকার
বান্দা গুনাহ যতবারই করুক না কেন, যত বেশি করুক না কেন আল্লাহ তাআলার ক্ষমা করতে কোন অন্তরাল নেই (অর্থাৎ ক্ষমা পাবার আশা আছে) তবে চারটি বিষয় বা কাজ আছে যেগুলোর কারণে গুনাহ থেকে ক্ষমা পেতে অন্তরাল হয় বাধাপ্রদানকারী হয়। সেগুলো নিম্নে বর্ণিত হল—
(১) আল্লাহর সাথে শিরক বা অংশীদার সাব্যস্ত করা:
- মহান আল্লাহ তাআলা বলেন—
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱفْتَرَىٰٓ إِثْمًا عَظِيمًا
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল। (সুরা নিসা: ৪৮)- হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে—
الظلم ثلاثة، فظلم لا يتركه الله، وظلم يُغفر، وظلم لا يُغفر. فأما الظلم الذي لا يُغفر، فالشرك لا يغفره الله. وأما الظلم الذي يُغفر، فظلم العبد فيما بينه وبين ربه. وأما الظلم الذي لا يترك، فظلم العباد، فيقتص الله بعضهم من بعض-
জুলম তিন প্রকার। একপ্রকার জুলম, যার সম্পাদনকারীকে আল্লাহ তাআলা ছেড়ে দেবেন না, আরেক প্রকার রয়েছে যা ক্ষমা করে দেওয়া হবে, আরেক প্রকার যা ক্ষমা করা হবে না। যে জুলমকে ক্ষমা করা হবে না, তাহল শিরক করা যা আল্লাহ পাক ক্ষমা করবেন না। আর যে জুলমকে ক্ষমা করা হবে তাহল: বান্দা ও তার রবের মধ্যকার জুলম। আর আল্লাহ তাআলা যে জুলমকে ছেড়ে দেবেন না তা হল: বান্দা অন্য বান্দার প্রতি জুলম করা। এক্ষেত্রে তিনি একে অপরের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন। (সিলসিলাতুস সহিহাহ: ১৯২৭)
(২) মুসলমান পরস্পরে ঝগড়া ফাসাদ ও বিদ্বেষ করা:
- সহিহ মুসলিম এর মাঝে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন—
জান্নাতের দরজাসমূহ সোমবার ও বৃহস্পতিবারে খোলা হয়। অতপর যার কুফরি করে না তাদের সকলকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় তবে সেই ব্যক্তিকে ক্ষমা করা হয় না যে তার অপর ভায়ের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে। তখন বলা হয়, এই দুজন যতক্ষণ নিজেরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে না জড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দাও, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না পরস্পর সংশোধন না হয়, এদেরকে অবকাশ দাও যতক্ষণ না তারা সংশোধন হয়। (সহিহ মুসলিম: ২৫৬৫)
হাদিস শরিফের বাহ্যিক অবস্থা থেকে বোঝা যায় যে, পরস্পর একে অপরকে ঘৃণাকারী, শত্রুতা পোষণকারীরা মাগফেরাত থেকে মাহরূম হবে অথচ মাগফিরাত প্রত্যেক সোমবার ও বৃহস্পতিবারে পাওয়া যায়। আর তাদেরকে মাগফেরাত দিতে বিলম্ব করা হবে যতক্ষণ তারা পরস্পরে সংশোধন না হয়, সন্ধি না করে নেয় এবং একে অপরের বন্ধু না হয়ে যায়। তাদেরকে ধমকি দেওয়া হয়েছে, এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের আদেশ দেওয়া হয়েছে।
(৩) হারাম খানা-পিনা:
বান্দা যখন এমন অবস্থায় মাগফেরাতের দু্আ করে যে, সে মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে, তার খাদ্য থাকে হারাম, তার পানীয় থাকে হারাম এবং তার পরিধেয় বস্ত্র হারাম থাকে তাহলে তার দুআ কবুল না হওয়াটা তার জন্য উপযোগী।
(৪) গুনাহকে প্রকাশ করা-প্রচার করা:
গুনাহ মাফ না হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক প্রভাব রাখে গুনাহকে প্রকাশ করা। একারণে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ كُلُّ أُمَّتِي مُعَافًى إِلَّا الْمُجَاهِرِينَ وَإِنَّ مِنْ الْمُجَاهَرَةِ أَنْ يَعْمَلَ الرَّجُلُ بِاللَّيْلِ عَمَلًا ثُمَّ يُصْبِحَ وَقَدْ سَتَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ فَيَقُولَ يَا فُلَانُ عَمِلْتُ الْبَارِحَةَ كَذَا وَكَذَا وَقَدْ بَاتَ يَسْتُرُهُ رَبُّهُ وَيُصْبِحُ يَكْشِفُ سِتْرَ اللَّهِ عَنْهُ
সালিম বিন আবদুল্লাহ হতে তিনি বলেন আমি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এর কাছ থেকে শুনেছি তিনি বলেন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমার সকল উম্মতকে মাফ করা হবে, তবে প্রকাশকারী ব্যতীত। আর নিশ্চয় এ বড়ই অন্যায় যে, কোন লোক রাতের বেলা অপরাধ করল যা আল্লাহ গোপন রাখলেন। কিন্তু সে সকাল হলে বলে বেড়াতে লাগল, হে অমুক! আমি আজ রাতে এই এই কাজ করেছি। অথচ সে এমন অবস্থায় রাত কাটাল যে, আল্লাহ তাআলা তার কর্ম লুকিয়ে রেখেছিলেন, আর সে ভোরে উঠে তার ওপর আল্লাহর দেওয়া আবরণ খুলে ফেলল। (সহিহ মুসলিম: ৬০৬৯)
অনুবাদ-মুহিববুল্লাহ খন্দকার
Last edited by a moderator: